ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

দেশে অনেক পাকিস্তানি গুপ্তচর

025626koborনিউজ ডেস্ক ::

পাকিস্তানের অনেক নাগরিক বাংলাদেশে পরিচয় গোপন করে অবস্থান করছে। তাদের মূল কাজ এ দেশে জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা এবং জাল মুদ্রার কারবার করা। জঙ্গি-অর্থায়নের প্রয়োজনেই তারা জাল মুদ্রার কারবার করে। তাদের অধিকাংশ গুপ্তচর বলে ধারণা নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর।

পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধেও জঙ্গিবাদে উসকানি দেওয়ার অভিযাগ রয়েছে। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে হাইকমিশনের কর্মকর্তা মাজহার খান ও গত ডিসেম্বর মাসে ফারিনা আরশাদ জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হন। তবে এই দুই কর্মকর্তা ও গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িত পাকিস্তানিদের নিয়ন্ত্রক ব্যক্তিটি এখনো ঢাকায় সক্রিয় রয়েছেন।

পুলিশ ও র্যাব গোয়েন্দা সূত্র জানায়, তাদের হাতে পাকিস্তান হাইকমিশনের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা এবং গুপ্তচরদের তত্পরতার বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য রয়েছে।

সম্প্রতি গুপ্তচর সন্দেহে দুই পাকিস্তানি নাগরিককে আটক করা হয়। একজনের নাম মোহাম্মদ রেহেমান; অন্যজন পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রেস কাউন্সিলর আমব্রিন জানের ব্যক্তিগত সহকারী আবরার আহমেদ খান। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর মুচলেকা নিয়ে আবরারকে ছেড়ে দেওয়া হলেও রেহেমানকে একটি মামলায় রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

জিজ্ঞাসাবাদে রেহেমান স্বীকার করেন, ছয় মাস আগে করাচি থেকে তিনি ঢাকায় আসেন। তাঁর সঙ্গে পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। পাকিস্তানের একটি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করার কথাও তিনি স্বীকার করেন। তাঁর সঙ্গে আন্তর্জাতিক জাল মুদ্রা ব্যবসায়ী চক্রের ঘনিষ্ঠতার তথ্যও পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছিলেন তিনি। তাঁর কাছ থেকে বেশকিছু পাকিস্তানি নাগরিকের নাম পাওয়া গেছে, যারা পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে বাংলাদেশে গুপ্তচরবৃত্তি করছে। তাদের সঙ্গে জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতার তথ্যও পাওয়া গেছে।

র্যাব-২-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে অভিযান চালিয়ে পাকিস্তানি নাগরিক মোহাম্মদ রেহেমান ও দুইজন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করা হয়। তাঁদের কাছে জাল ডলার এবং পাকিস্তানি ও ভারতীয় রুপি পাওয়া গেছে। পরে তাঁদের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় সোপর্দ করা হয়। তাঁদের নামে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা র্যাবের কাছে স্বীকার করেন, তাঁরা উপমহাদেশে জাল মুদ্রার ব্যবসা করার পাশাপাশি পাকিস্তানের একটি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে তথ্য সংগ্রহ করতেন। স্থানীয় কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীর কাছ থেকে তাঁরা তথ্য পেতেন। শুভাকাঙ্ক্ষীদের অর্থ জোগান দিতেই তাঁরা জাল মুদ্রার ব্যবসা করতেন। বিভিন্ন পেশাজীবী শ্রেণিতে তাঁদের শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছে।

ওই তিনজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার এসআই সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গত ২০ জানুয়ারি রাতে পলিটেকনিক কলেজের পেছনের রাস্তা থেকে পাকিস্তানি মোহাম্মদ রেহেমান এবং বাংলাদেশি মোজাম্মেল হক ও ফারুক আহম্মেদকে আটক করে র্যাব। রিমান্ডে তারা জাল মুদ্রার ব্যবসার কথা জানিয়েছে। পাকিস্তানি নাগরিককে গুপ্তচর সন্দেহ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।

পুলিশ ও র্যাব সূত্র জানায়, রেহেমান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পাকিস্তানি নাগরিক। তাঁর বাবা আবদুল মান্নান ৩০ বছর আগে করাচিতে চলে যান। তাঁদের আদি ঠিকানা বরিশালের গলাচিপা থানার চরশিবায়। পাকিস্তান থেকে ঢাকায় আসার পর মোহাম্মদপুরে বাসা ভাড়া নেন রেহেমান। মোজাম্মেল হকের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সাতরশিয়া গ্রামে। ফারুক আহমেদের গ্রামের বাড়ি একই উপজেলার চৌকা গ্রামে। তাদের কাছ থেকে তিন লাখ ভারতীয় রুপি, ৭০০ ইউএস ডলার, দুই হাজার ৭৭০ পাকিস্তানি রুপি এবং ৮৯ হাজার ৪৬২ টাকা জব্দ করা হয়। রেহেমানের কাছে একটি পাকিস্তানি পাসপোর্ট ও একটি পাকিস্তানি জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে।

পাকিস্তান হাইকমিশনের আবরার আহমেদ খানের বিরুদ্ধেও অনেক অভিযোগ রয়েছে। গত সোমবার ঢাকায় আটক হওয়ার সময় তাঁর কাছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ভারতীয় মুদ্রা পাওয়া যায়। তিনি সাদা নম্বর প্লেটযুক্ত মোটরসাইকেল ব্যবহার করতেন। নিয়ম অনুযায়ী, দূতাবাসের লোকদের হলুদ নম্বর প্লেট ব্যবহার করার কথা।

সূত্র জানায়, সন্দেহজনক গতিবিধির কারণে গত কয়েক মাস ধরে আবরার খান নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর নজরদারিতে ছিলেন। ২০১১ সাল থেকে ঢাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। প্রায়ই তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের আশপাশে ঘোরাফেরা করতেন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার উদ্দেশ্যে। এটি তাঁর কাজের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ছিল না। কালের কন্ঠ

পাঠকের মতামত: